সান্ডা কি খায়? সান্ডা আর গুইসাপ কি এক, সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম?

Spread the love

সান্ডা কি খায়? সান্ডা আর গুইসাপ কি এক, সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম? সান্ডা খেলে কি হয়? সান্ডা তেলের উপকারিতা এবং সান্ডা রান্না এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

সম্প্রতি মরু অঞ্চলের প্রাণী সান্ডা ধরা ও খাওয়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত এক প্রবাসী বাংলাদেশীর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রাণীটি নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলছে। তৈরি হচ্ছে মজার মিম, কৌতুক ইত্যাদি। এই প্রশ্নও উঠেছে—এই প্রাণীটি খাওয়া কি ইসলামসম্মত? সান্ডা খাওয়া কি হালাল, না হারাম? চলুন জেনে নিই।

সান্ডা কী ধরনের প্রাণী?

সান্ডা, যা বৈজ্ঞানিকভাবে Uromastyx নামে পরিচিত, একটি মরুভূমি অঞ্চলের টিকটিকি। আরবি ভাষায় এর নাম ‘দাব্ব’ (ضبّ)। এটি মূলত আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলের প্রাণী। সান্ডার শরীর শক্ত এবং এর লেজ মোটা ও খাঁজযুক্ত, যা আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে সান্ডার তেল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যৌন শক্তি বৃদ্ধির ওষুধ হিসেবে।

সান্ডা খাওয়ার ব্যাপারে নবিজি (সা.) কী বলেছিলেন?

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে উম্মুল মুমিনীন হজরত মায়মুনার (রা.) বাড়িতে গেলাম। তখন ভুনা দব্ব বা সান্ডা আনা হলো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেদিকে হাত বাড়াচ্ছিলেন। মায়মুনার (রা.) বাড়িতে উপস্থিত নারীদের একজন বললেন, আপনারা আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানান তিনি কী খেতে যাচ্ছেন। তখন তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, এটি দব বা সান্ডা। এ কথা শুনে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার হাত তুলে নিলেন।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

অর্থাৎ, নবিজি (সা.) সান্ডাকে অরুচিকর মনে করে নিজে খাননি, তবে সাহাবিদের খেতে নিষেধ করেননি। সাহাবি খালিদ (রা.) নবিজির (সা.) সামনেই এটি খেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সান্ডা খাওয়া হালাল নয়, তবে এটি মাকরুহ (অরুচিকর)।

ইসলামি আইনবিশারদদের মতামত

ফকিহ বা ইসলামি আইনবিশারদগণ সান্ডা খাওয়ার বিধান নিয়ে মতভেদ করেছেন।

  • হানাফি মতামত: হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, সান্ডা খাওয়া হারাম। কারণ এটি নাপাক বা অরুচিকর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। তাদের মতে, সান্ডা খাওয়ার বিষয়টি ইসলামের শুরুর সময়ের ঘটনা, যখন কোরআনের এই আয়াত অবতীর্ণ হয়নি:
    “وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ”
    (অর্থাৎ, অপবিত্র বস্তুসমূহ তাদের জন্য হারাম) – সুরা আ’রাফ: ১৫৭।
  • মালেকি, শাফেঈ ও আহমদ (রহ.): ইমাম মালেক, শাফেঈ এবং আহমদ (রহ.) সান্ডা খাওয়াকে হালাল বলেছেন। তাদের মতে, হাদিসের ভিত্তিতে সান্ডা খাওয়া হালাল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সান্ডা

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় সান্ডা ধরা এবং খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এবং এতে হাস্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মিম এবং কৌতুক তৈরি হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা কফিলের জন্য সান্ডা ধরার ভিডিও শেয়ার করছেন এবং এটিকে হাস্যকরভাবে প্রচার করছেন।

সান্ডা আর গুইসাপ কি এক?

সান্ডা এবং গুইসাপ দুটি আলাদা ধরনের খাবার, তবে এদের মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য থাকতে পারে। গুইসাপ সাধারণত পাখির মাংস বা কিছু দেশে হালাল খাবারের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু সান্ডা বেশিরভাগ সময় গরু বা মহিষের মাংস এবং তেল দিয়ে তৈরি হয়। সান্ডা ও গুইসাপের মধ্যে গঠন এবং স্বাদ ইত্যাদি পার্থক্য রয়েছে, যদিও দুটোই মাংসভিত্তিক খাবার।

সান্ডা খেলে কি হয়?

সান্ডা খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে এর খাওয়ার পর কিছু সাময়িক প্রভাবও থাকতে পারে। সান্ডার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, ভিটামিনস, এবং প্রোটিনস শরীরের জন্য ভালো। তবে বেশি সান্ডা খাওয়ার কারণে আপনার শরীরের চর্বি বাড়তে পারে এবং এতে হাই ক্যালোরি এবং সোডিয়াম বেশি থাকায় ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি থাকতে পারে।

এছাড়া সান্ডার তেলও কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টিজ রয়েছে।

সান্ডা তেলের উপকারিতা

সান্ডা তেল বিভিন্ন রকম উপকারিতা প্রদান করে যা শরীরের স্বাস্থ্য, ত্বক, এবং চুলের জন্য উপকারী হতে পারে। সান্ডা তেলের কিছু প্রধান উপকারিতা হল:

  1. ত্বক উজ্জ্বল করে: সান্ডা তেল ত্বককে মোলায়েম এবং উজ্জ্বল রাখে।
  2. চুলের জন্য উপকারী: এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলকে মজবুত করে।
  3. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: সান্ডা তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  4. শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য: সান্ডা তেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টিজ ক্ষত সারাতে সহায়ক।

তবে, সান্ডা তেল ব্যবহারের আগে এর পরিমাণ সঠিকভাবে নিশ্চিত করা উচিত।

সান্ডা রান্নার পদ্ধতি

সান্ডা রান্না করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যা দেশভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ স্যান্ডা রান্নার পদ্ধতি নিম্নরূপ:

সান্ডা তেলে ভাজা:

১. প্রথমে সান্ডা মাংস ছোট টুকরো করে কেটে নিন।
২. একটি প্যানে সান্ডা তেল গরম করুন।
৩. তাতে মাংসের টুকরোগুলো দিয়ে ভালভাবে ভাজুন।
৪. মসলাগুলো (লবণ, মরিচ, আদা, রসুন) দিয়ে মিশিয়ে আরও কিছু সময় রান্না করুন।
৫. মাংস সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে থাকুন।

সান্ডা স্যুপ:

১. সান্ডা মাংস বড় টুকরো করে কেটে স্যুপ পাত্রে দিন।
২. তাতে পানি, লবণ, মরিচ, মসলাপাতি দিয়ে সিদ্ধ করুন।
৩. স্যুপ হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

উপসংহার

এখানে সান্ডা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যেমন সান্ডা কি খায়, সান্ডা ও গুইসাপের পার্থক্য, সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম, সান্ডা খেলে কি হয়, সান্ডা তেলের উপকারিতা এবং সান্ডা রান্নার পদ্ধতি। আপনার স্বাস্থ্য এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই বিষয়গুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।

এখন আপনি যদি সান্ডা রান্নার প্রক্রিয়া এবং এর উপকারিতা আরও ভালোভাবে জানেন, তবে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এটি আরও সহজ এবং উপকারী হতে পারে।

Leave a Comment

Scroll to Top